মেস সংবিধান ও বৃন্দাবন (রম্যরচনা)
ডঃ নিতাই ভট্টাচার্য্য
শিশির আর কমল মেসে থেকেই চাকরি করছেন আজ বছর দুয়েক হবে। বাড়ি থেকে রোজ রোজ সময়ে অফিসে পৌঁছানো ভীষণ অসুবিধাজনক তাই এই সিদ্ধান্ত। শিশির আর কমলের মেস মানে, মিনিমাম আয়োজনে মিডিয়াম জীবনযাত্রা। থেকে খেয়ে চাকরি টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা। এই মাত্র।
মেসে থাকতে খেতে গেলে কাজের লোক লাগে, স্বাভাবিক। নয়তো সময়ে আহার জুটবে কি ভাবে। সে কথা ভেবেই শুধু রান্নার লোক অর্থাৎ একজন রাঁধুনি রাখা হয়েছে। তৈজসপত্র ধোয়া মোছা তাকেই করতে হয়, দুজনের থাকার ঘরটিও মাসে একবার পরিষ্কার করতে হবে। কনট্রাক্ট সেই রকমই থাকে। এছাড়া কাজকর্ম আর বিশেষ কিছু নেই। তবে কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যা আছে মাত্র দুটো, এর বেশি নয়।
প্রথমটি হলো সময় সংক্রান্ত। মেসে ঠিক সময়ে রান্না শেষ করা রীতিমত চ্যালেঞ্জ। কারণ, ওভেন। সেটি বহু পুরনো। বাড়িওয়ালা বিপদ ভঞ্জন বাবু দীর্ঘদিন এই ওভেন ব্যবহার করে বাতিল করেছেন। জোড়াতালি দিয়ে সেটিকেই সার্ভিসে ফিরিয়ে আনা হয়েছে আবার। বর্তমানে সেই ওভেনের একই সঙ্গে দু মুখে হাসি ফোটে না। একটি বার্নারই কাজ করে। অপরটি আউট অফ অর্ডার। কাজেই রান্না কখন শেষ হবে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয় সমস্যাটিই গুরুত্বপূর্ণ ও গোলমেলে। সেইটি মেসের নিয়ম কানুন, আইন সংক্রান্ত ব্যাপার। মেস সংবিধান বলা যেতে পারে সেটিকে। রাঁধুনিকে এই নিয়ম মেনেই চলতে হয়, সে লক্ষ্মণগণ্ডির বাইরে পা রাখলেই বিপদ।
মেস তৈরির জন্মলগ্নে যে এই নিয়মগুলি এসেছে এমন নয়। চলতে চলতে নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা থেকে ঠেকে শিখে তৈরি এই মেস সংবিধান। ফলে ভীষণ পোক্ত। ফাঁকফোঁকর পাওয়া মুশকিল। আর এ সংবিধান অসম্পূর্ণও বটে। অসম্পূর্ণ এই কারণে যে নতুন নতুন রাঁধুনি আসার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন সমস্যার উদয় হয়েছে। আর সেই সমস্যা যাতে পুনরায় না আসে তার জন্য নতুন নিয়ম সংবিধানে সংযোজিত হয়েছে। যেমন, একবার কি হোলো, রান্নার সময়ে দেখা গেলো হলুদ নেই। এ দিকে সেই মাসের ম্যানেজার কমলও মেসে অনুপস্থিত। অগত্যা কানাইয়ের মুদি দোকান থেকে হলুদ কিনে এনে সামাল দিয়েছিল সেই সময়ের রাঁধুনি। তারপর রাঁধুনির আর মনে নেই হলুদের কথা। কমলকে বলতে ভুলে গেছে বেমালুম। ফলে মুদির খাতায় হলুদের দাম ওঠেনি। মাসের শেষে কানাই আর কমলের হিসাব মেলে না, কয়েক টাকার তফাৎ হচ্ছে। এই ভাবে খরিদ্দারের কাছে টাকা বেশি নিচ্ছো, বলে ততক্ষণে কমল চারকথা শুনিয়ে দিয়েছে কানাই কে। পরে দেখা গেলো কানাই ঠিক। হলুদের হিসাব কমলের খাতায় নেই, তাই গরমিল।
মুখের কথা ফিরে আসে না, এইবার কানাই-এর পালা। আচ্ছা করে শুনিয়ে দিয়েছিলো সে, সবার সামনে বেইজ্জত হয় কমল। রাতেই নিয়ম হয়ে যায়, যে ম্যানেজার সেই কেবল মুদি দোকান থেকে জিনিস আনবে। অন্য কেউ নয়, তাতে রান্না না হয় হোক।
নতুন রান্নার লোক এলে সঙ্গে সঙ্গে শিশির ও কমল এই সমস্ত নিয়মগুলি শুনিয়ে দেন। এবং অসাংবিধানিক কাজের জন্য রাঁধুনি চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে পরে সে কথা শোনাতে ভুল হয় না। কোনো ধানাই পানাই চলে না। পর পর বেশ কয়েকটি রান্নার লোক মেসের নিয়মের গুঁতোয় ধরাশায়ী হয়ে বরখাস্ত হয়েছে। শুধু একজনই স্বেচ্ছা অবসর নিয়েছে, সে হোলো কেষ্ট। তার কেস ছিল আলাদা।
বৃন্দাবন, বর্তমান রাঁধুনি। আজই প্রথম এসেছে রান্না করতে। বৃন্দাবনের প্রথম দিনের কাজেই চমকে গেছে কমল ও শিশির। তাদের রচিত সংবিধানের ধারায় নিজেরাই এমন ভাবে ধরাশায়ী হবে, কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেননি।
গতকাল রাতে মেসে দেখা করতে এসেছিলো বৃন্দাবন। বলা ভালো ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলো। সেই সময় মেসের সংবিধান শুনিয়ে দেওয়া হয়েছে তাকে। কী ভাবে কী করতে হবে একটা একটা করে ব্যাখ্যা করেছেন দুজনে।
যেমন পটল, বেগুন এই ধরনের সবজি যদি ভাজা হয় কোনো দিন, তবে তা যুগ্ম সংখ্যায় হতে হবে সবসময়। এই নিয়ম বলবৎ হবার আগে, একটা উড়িয়া ছোকরা রান্না করতো। একদিন বেগুন ভেজে বেচারি কি ফেরে পড়েছিল। আস্ত একটা বেগুনকে পাঁচ টুকরো করে ভেজে ছিলো। আর যায় কোথায়। পরিবেশনের সময় দুই তরফের প্রশ্ন, পাঁচ পিস কিভাবে হয়? যদি লম্বালম্বি দুফালা করে আড়াআড়ি কাটা হয় তাহলে এক পোঁচ দিলে চার, দু পোঁচ দিলে ছয় টুকরো হয়, তার বেশি দেওয়া যেতো না তাতে হাত কেটে যেতে পারতো। বেগুন তেমনই ছিলো। তাহলে পিস বিজোড় সংখ্যায় এলো কেনো? এমন প্রশ্নের সামনে ঘাবড়ে যায় রান্নার ছেলেটি। তার কোনো দোষ ছিল না, বেগুন কানা। একটা অংশ বাদ দিয়েই পাঁচ টুকরো বের করেছে। আর কিই বা করতো সে। ‘অতই সহজ, আমি নিজে রান্নার আগে দেখেছি আস্ত বেগুনটি, একদম দারুন… ‘, শিশির বলেন। পঞ্চম টুকরোটি তখনও থালায় রয়েছে, কারোর পাতেই পড়েনি। কমল আর শিশির মনে মনে দুজনই সন্দেহ করে দু জনকে। হয়তো চোখের আড়ালে সেটি চালান হতো তাদেরই একজনের পাতে। রাঁধুনির সঙ্গে আড়ালের কথা। এ পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ। এদিকে বেগুনের পোকা লাগা টুকরো ফেলে দেওয়া হয়েছে কাজেই প্রমাণও নেই। ব্যস, চাকরি যায় বেচারির। কাজেই পক্ষপাতদুষ্ট হওয়া চলবে না। বলেন কমল। শুনে মাথা নেড়ে সায় দেয় বৃন্দাবন। বলে, সে তো বটেই এ ভারী অন্যায় কাজ।
মাছের ক্ষেত্রে নিয়ম খুব গোলমেলে নয়। বলেছিলেন কমল। সামনে দাঁড়িয়ে শুনছে বৃন্দাবন। শোনো বৃন্দাবন বিষয়টা জটিল কিছু নয়। চুনোমাছ রান্না হয়। তবে পরিবেশনের সময় সমান দু ভাগ হওয়া চাই। সন্দেহ হোলে গণনা হবে, রিকাউন্টিংও অসম্ভব কিছু নয়। পরিস্থিতি দাবী করলে পুনর্গণনা হতেই পারে, তেমন নজিরও আছে। আর চারা পোনা রান্না করলে সাইজ একটা ফ্যাক্টর। ছোটো বড়ো মিলিয়ে দিতে হবে দু জনকে। ডিম রান্নার ক্ষেত্রে, সংখ্যায় অবশ্যই ইভেন নাম্বার আর সেম সাইজ হতে হবে। বিষয়টা বুঝেছে বৃন্দাবন।
এইবার মাংস নিয়ে নিয়মের কথা শোনায় শিশির।
মাংস, বিতর্কিত বস্তু। সে নিয়ে জল অনেক দূর গড়িয়েছে। একদিনই মেসে মাংস রান্না হয়েছিলো, তারপর থেকে শিশির বা কমল কেউই মাংসের নাম নেয় না। সে এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। মেসের এক কালো অধ্যায়। তারপর থেকে মেসের সংবিধানে ওটাকে পার্মানেন্টলি বাদের তালিকায় রাখা আছে। মাংস ব্ল্যাকলিস্টেড। কারণ, মাংসের ক্ষেত্রে শুধুই টুকরোর হিসাব রাখলে চলবে এমন নয় মোটেই। ছোটো, বড়ো মাপে অনেক কিছুই যায় আসে। শুধু তাই বা কেনো, মাংসের ঝোলের আলু আর নরমাল তরকারির আলু এক নয়, তফাৎ আছে। তাছাড়া মাংসের ঝোল ও মূল্যবান, সমবন্টন হওয়া উচিত। আর রান্নার সময় যতোই সুবাস উঠুক, গরম কড়াই থেকে তুলে টেস্ট করা চলবে না কিছুতেই। কাজেই এতো কিছুর হিসাব মেনে নিয়ম তৈরি কঠিন দেখেই ওটাকে মেসে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ইচ্ছে হলে হোটেলে খেয়ে এসো। সে তোমার মর্জি। কিন্তু মেসে নেভার।
মাংসের কথা উঠলেই শিশির, কমল দুজনেই কেমন কুঁকড়ে যান। একদিন রাতে মাংস রান্না হয়েছিলো। গেলো বছরের ঘটনা। এলাকার চেনা ছেলে বলে মাংস কিনে এনেছিল রাঁধুনি কেষ্ট নিজেই। তাছাড়া রান্নার হাতও বেশ ভালো। মাংস কষানো থেকে শুরু হয়েছিল শিশির আর কমলের টেস্ট করা। এক টুকরো শিশির তোলেন তাই দেখে কমলও বেছে তুলে নেন এক টুকরো। এর মাঝে শিশির আর কমলের চোখ এড়িয়ে কেষ্টও দু টুকরো টেস্ট করেছে। পরিবেশনের সময় শুরু হলো অশান্তি। রান্নার আগেই গুনেছিলো শিশির মোট কয় টুকরো আছে।এখন কমল আর শিশিরের টেস্ট করা আর কড়ায়ের অবশিষ্ঠ টুকরো নিয়ে হিসাব করলে দু টুকরোর হিসাব মেলে না। কোথায় গেলো? জবাব নেই কেষ্টর কাছে। ব্যস, দুজনে চেপে ধরে কেষ্টকে। ভাগ্যিস কোনো কাজে নিচে এসেছিলেন বিপদ ভঞ্জন। তাই রক্ষা পেয়েছিল কেষ্ট। নয়তো শিশির আর কমল দু জনেই খুনের দায়ে চাকরি হারিয়ে এতদিন জেলে থাকতেন। সেই ভয়াবহ ঘটনার পর থেকে কেষ্ট দাস সেচ্ছা অবসর নিয়েছে মেসের রান্না থেকে। সে মাসের টাকাও নিয়ে যায়নি। তাছাড়া বাইরেও রান্নার কাজ আর করে না। এখন চৌমাথায় সেলুন দিয়েছে। পাড়া ঘরের ছোটো খাটো অনুষ্ঠানে কেষ্টর রান্নার কদর আছে। ডাক পড়ে। যায় না। এখন খুন্তি ছেড়ে ক্ষুর ধরেছে। পেশা পরিবর্তনে পরামাণিক হয়েছে। সেলুনের সামনে বোর্ড ঝোলানো আছে, ” রান্নার কাজে দয়া করে ডাকবেন না”।
কেষ্ট কাণ্ড হবার পর বেশ কিছুদিন আতঙ্কে কাটিয়েছে শিশির আর কমল। নেহাত বিপদ ভঞ্জন বাবুর ভাড়াটিয়া, নয়তো মুখের জ্যামিতি পাল্টে যেতো, এমন হুমকি আড়ালে আবডালে শুনেছেন। সাবধান করেছেন বিপদ ভঞ্জন, রান্নার লোকের গায়ে যেনো হাত না ওঠে। এই সময় বেশ কয়েক দিন নিজেরাই রান্না করে খেয়েছেন। তাতে অশান্তি বেড়েছে বই কমেনি। রাতের দিকে যদিও সম্ভব দিনের বেলায় কোনো ভাবেই সময় হয়ে ওঠে না। অফিস যাবার তাড়া থাকে। ফলে আবার কাজের লোকের অন্বেষণ শুরু। ততদিনে কেষ্ট কাণ্ড জেনে ফেলেছে অনেকেই। কেউই রাজি হয়না রান্নার কাজে। কেষ্টর মতো রান্নার স্বরলিপি জানা মানুষ যেখানে টিকতে পারেনি, সেখানে আমি কি ভাবে সামলাবো এমন কথা শুনিয়েছে অনেকেই। তবে সেই সব কথা গতকাল রাতে বলা হয়নি বৃন্দাবনকে। চেপে রাখা হয়েছে, শুনলে ঘাবড়ে যেতে পারতো। শুধু বলা হয়েছে মেসে মাংস চলে না। ব্যস, এইটুকুই।
এরপর সংবিধানে যে কয়টি ধারা লেখা হয়েছে সেগুলি রামুর বিদায়ের পরে। বাড়িওয়ালার হাত ধরে এসেছিলো রামু। সদ্য বিপদমুক্ত শিশির আর কমল, রামুকে ইন্টারভিউ ছাড়াই কাজে নিয়েছিলো। তাছাড়া উপায়ও ছিল না। পরিস্থিতি অন্যরকম ছিলো। তারপর সমস্যাও অন্যরকম চেহারায় দেখা দিল। রামুর রান্না ঝোল, ঝাল, অম্বল সব পদের একই স্বাদ। মুখে তোলাই দায়। বলে না দিলে বোঝা মুস্কিল খাবারটা আসলে বাঁধাকপি না লাউ। এছাড়া অন্য ব্যাপারও ছিলো। রামুর মুখ থেমে নেই কখনো। উচ্চ স্বরে কথা এবং মুখে অগ্নিদেব সর্বদাই বিরাজমান। কমল বা শিশির কেউই ধূমপায়ী নন। আর থাকতে থাকতেই রামু হাতের খুন্তি দিয়ে বাড়ি মারে রান্নার কড়াই এর উপর, অনেকটা রাজমিস্ত্রি যেভাবে নতুন গাঁথনির ইঁটের উপর কর্নিকের বাড়ি মারে। কমল মুর্শিদাবাদের মানুষ। এমন আদব কায়দা তার অপরিচিত নয় মোটেই। তাই সন্দেহ কমলের মনেই প্রথম আসে। কথায় কথায় আবিষ্কার করেন রামু আসলে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে, এখন হাতে কাজ নেই তাই পেশা পরিবর্তন। কি সাংঘাতিক! পরদিনই রামু বিদায় এবং সংবিধানে নতুন নিয়মের অন্তর্ভুক্তি হয়। রাঁধুনি সত্যই রাঁধুনি কিনা, পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই মেসের কাজে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হবে। আর অযথা বেশি কথা চলবে না কাজ করতে এসে। নয়তো রামুর মতো…।
বৃন্দাবনকে সতর্ক করা হয়েছে। মেসের মধ্যে ধূমপান চলবে না। অহেতুক অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা বারণ। রামুর কাহিনীটা বাদ দেননি শিশির। সবটা শুনে বৃন্দাবন বলে, সে তো ঠিক কথাই। কাজ করতে এসে এতো কথার কি প্রয়োজন।
আজ যথা সময়ে হাজির হয়েছিল বৃন্দাবন। এ মাসের মেস ম্যানেজার শিশির, সেকথা গতকাল শুনে গেছে। বৃন্দাবন আসা মাত্রই আজকের মেনু কি হবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন শিশির। সপ্তাহের মাঝে ছুটি। সচরাচর মেলে না। তাই আজ কাঁচা আমের টক হবে। ডাল, পোস্ত, ভাত। শেষ পাতে গোটা সরষে দিয়ে আমের টক, ভেবেই সরস হয়ে উঠেছিলো শিশিরের জিভ। গরমের দিনে আর কি চাই।
দুপুরের দিকে স্নান সেরে খেতে বসার আগে মনের প্রস্তুতিও তেমনই ছিলো। প্রথম পাতে ডাল, পোস্ত দিয়ে উদর পূরণ করেননি শিশির। ফাঁকা রেখেছিলেন সামান্য। টক দিয়ে ভাত খেয়ে ভরাবেন। শেষ পাতের তৃপ্তি আজ চেটে পুটে নেবেন। বৃন্দাবনের রান্নার হাতটিও বেশ। ডাল আর পোস্ততেই মাত করে দিয়েছে। এতদিনে একজন সত্যিই পাকা রাঁধুনি পাওয়া গেছে। কমল খুশি, শিশিরও। পোস্ত মাখা ভাতের শেষ গ্রাসটুকু গলাধকরণের পর বৃন্দাবনকে ডাকতে যাবেন, দেখেন বাটি হাতে সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে সে। খানিকটা ভাত খাবার পাতে আগেই নিয়ে রেখেছিলেন শিশির। সেই ভাতের স্তূপের মধ্যিখানে সামান্য খাল করে শিশির বলেন, দাও দাও এর মাঝে টক দাও। নুন মাখানো কয়েক টুকরো কাঁচা আম শিশির আর কমলের পাতে দেয় বৃন্দাবন। বলে, টক হয়নি তাই ভাগের ভাগ নিয়ে নিন। সমান সমান করেই আম কুচিয়েছি। ক্ষণিক নিরবতা। বাসনা ভঙ্গ শিশিরের। কমলেরও। ভেবে ছিলেন টক, পেলেন কাঁচা আম! নাকের বদলে নরুণ! দুপুরের খাবারের তৃপ্তি চৌপাট। রাগে অগ্নিশর্মা দু জনেই। শান্ত বৃন্দাবন, হালকা হাসির আভা মুখে।
রাগত কণ্ঠে শিশির বলেন, ‘মানে?’। নিচু গলায় উত্তর দেয় বৃন্দাবন, আসলে…।
বৃন্দাবনের উত্তর শুনে হতভম্ব অবস্থা দুজনের। রান্নার শেষদিকে বৃন্দাবন দেখে যে চিনির বোতল খালি। এদিকে ঘরে তখন শিশির নেই। কমল ছিলেন ঠিকই, কিন্তু নিয়মের গেরো। ম্যানেজার ছাড়া মুদি দোকানের জিনিস আসবে না। তাই চিনির অভবে টক আর রান্না করেনি বৃন্দাবন। আবার খাদ্যবস্তু অপচয়, অপরাধ। পক্ষপাতিত্ব সে করতে পারে না কোনো ভাবেই। সব নিয়ম মাথায় রেখে দু জনের পাতেই তিন টুকরো করে কাঁচা আম দিয়েছে। মেস সংবিধানের কোনো ধারাতেই দোষ করেনি সে। খাপে খাপে নিয়ম মেনে চলেছে, তাতেই ক্ষেপে উঠেছেন শিশির আর কমল। দু জোড়া রাগত চোখের সামনে দাঁড়িয়ে বৃন্দাবন, মুখে হালকা হাসির রেখা অটুট।