সাধনা নিভৃতে
বলাই দে
মন্দিরে কে থাকেরে ভাই
মসজিদে কে থাকে,
বিপদ আপদ এলেই সবাই
ব্যাকুল হয়ে ডাকে।
দেবদেবী আর আল্লাখোদা
কি যে তাহার রূপ,
মাথা ঠুকে রক্ত ঝরায়
রহেন তিনি চুপ!
ভক্ত জনে উড়ায় চড়ায়
দেখতে যে পায় দ্যুতি,
আল্লাখোদা দেবদেবীরা
রচেন সংহতি।
খুঁজে খুঁজে ব্যাকুল হলে
দেন বুঝিবা দেখা,
মনের মাঝেই ফেনিল তিনি
মনেই চরণ রেখা।
কেউ বা বড় কেউ বা ছোট
মিছেই তর্ক জোড়া,
সময় ফেরে চলে জগৎ
ভাবছো কপাল পোড়া।
সময়ের ডাক হাতছানি দেয়
ভাসা কালের স্রোতে,
শৃঙ্খলিত করতে জীবন
সাধনা নিভৃতে।
জাত জুয়ারী
বলাই দে
হুলোস্থুলো কাণ্ড যত
আমার এই সোনার দেশে,
কালনেমিরা ঘুরে বেড়ায়
সাধারণের ছদ্মবেশে।
একে দিয়ে ওকে তাতায়
এ এক আজব খেলা,
নীল নক্সা তৈরী করে
এবেলা ওবেলা।
ধর্মভীরু লোকের মনে
সুড়সুড়ি দেয় দাদা,
ধনী গরীব এক সুরেতে
এক গোয়ালে বাঁধা।
মনের বিকাশ হয়নি বলেই
সুড়সুড়িতে কাবু,
হিহি হোহো হাসছে দেখো
টানিয়ে রঙিন তাবু।
রোজ ভিখারি কোটি মানুষ
তার যে কিসের জাত!
পাঁজর ভাঙা নিঃস্ব যারা
যার পেটে নাই ভাত!
জলাশয়
বলাই দে
গ্রামের শেষে বিশাল বিপুল
ওই যে জলাশয়,
তাকে দেখেই কাটে বছর
সকাল সন্ধ্যা হয়।
জলাধারের পাড়ে পাড়ে
বিশাল গাছের সারি,
হেঁটেই চলে মেঠো পথে
সকল নরনারী।
নানান দেশের পরিযায়ী সব
ভিড়ে সকাল থেকে,
সাঁঝের বেলায় যায় ফিরে যায়
নানান সুরে ডেকে।
স্বর ক্ষেপনে মল্লার দল
ভাটিয়ালি গায়,
রুজি রুটির টানেই ওরা
আছে এদিকটায়।
কাছের দূরের বন্ধুরা ওই
বনভোজনের টানে,
সারাবছর শীতগরমে
আসে যে এইখানে।
অমর একুশ বুক ভারী দিন
ভাষা শহীদ মেলা,
সুরে গানে ভরিয়ে তোলে
ভাসিয়ে জীবন ভেলা।
মাছরাঙা
বলাই দে
সেজেগুজে বসে আছে
মগডালে ওই ঝিলের কাছে,
রোজই দেখি সময়মতো
একই ডালে একই গাছে।
ব্যস্ত সবাই ছেলেবুড়ো
নাইযে তাহার তাড়াহুড়ো,
রেওয়াজি এই জীবনধারা
ধৈর্য যেন অটুট পুরো।
রঙটি বড়ই মনোলোভা
সেজেগুজে বসে কিবা,
শরীর থেকে লম্বাটে ঠোঁট
মাঝেমধ্যে ঘোরায় গ্রীবা।
লক্ষ্যে তিনি বড়ই স্থির
ঝিলের জলে রাখেন শির,
নাইকো তেমন হাঁ পিত্যেশ
একাগ্রতায় ধরে না চিড়।
বিশ্বাসে খুব ভরপুর
ধ্যানে কভু কাটেনা সুর,
একমনে এক ধ্যানে
কাটায় বসে ভরদুপুর।
এইতো ওই মারলো ছোঁ
কোথায় যাবে মাছের পো,
লকলকিয়ে উঠলো ঠোঁটে
ধ্যানটি তাহার সফল তো!