free site maker

[ঈশানকোণ নতুন সংখ্যা দেখার জন্যে এখানে ক্লিক করুন]


গল্পাণু            Home        
যুগান্তর মিত্র এবং ব্রতীন বসুর অণুগল্প



যুগান্তর মিত্র                                        

সংস্কার

ভ্যান চালক নিরু খবরটা পেল একজনের কাছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে দিদিকে জানাল। দিদি রমা শুনে প্রথমে মুখ গোঁজ করে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর গজগজ করে, ঐ লোকটারে আমি বাবা বইল্যা মানি না। আমার জন্মের পরই চইল্যা গিয়া কোন্‌ এক ভাতারখাকি মাগীরে বিয়া করল। তিন-চাইর বচ্ছর বাদে আবার আইল। দিন তিনেক ছিল। তারপর আর আসে নাই। এরপরেই তুই জন্মাইলি।
--- আমি তো দেখিই নাই লোকটারে।
--- হ হ, দেখছস। কিন্তু মনে নাই তোর। ছুডুকালে একবার আইছিল। মা খ্যাদাইয়া দিছে।
ওদের কথার ফাঁকেই হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢোকে সবিতা। খবরটা শুনে আরও তিন বাড়ি বাসন মাজা, ঘর মোছার কাজ ফেলে ছুটে এসেছে।
--- তোগো বাপ মরছে শুনছস তো ?
--- হ, শুনছি। রমা জানায়।
--- তাইলে আর দেখস কী ? ক্রিয়াকর্ম কিছু করন লাগে তো !
--- কীসের ক্রিয়াকর্ম মা ? হেয় কখনো কিছু কর্তব্য করছে ? তার মরণের লাইগ্যা ক্রিয়াকর্ম করন লাগব না।
ততক্ষণে নোড়া দিয়ে হাতের শাঁখা ভেঙে ফেলেছে সবিতা। তারপর কলতলায় গিয়ে সিঁথির সিঁদুরও ঘষে ঘষে মোছার চেষ্টা করে।
--- আমি আর ভাই কিন্তু কোনো মানামানির মইধ্যে নাই মা, সাফ কইয়া দিলাম।
--- ঐ লোকটার রক্তই তোগো শরীলে আছে রে। মানতে হইবই।
--- থাকুক গা। আমরা মানুন না কইয়া দিলাম। এবার তুমি যা করার করো। নিরু জানিয়ে দেয়।
--- আমি শাঁখা ভাঙলাম, সিন্দুর মুছলাম ...
--- সে যা করছ ভালোই করছ। লোকটার কুনু চিহ্ন রাখনের দরকার নাই আর।
--- কী কস এইসব ?
--- দিদি যা কইছে ঠিকই কইছে মা। মানলে তুমি মানো। আমরা পারুম না।
নিরু আবার ভ্যান নিয়ে বেরিয়ে যায়। রমা এসে চৌকিতে শুয়ে পড়ে। সবিতা তখন হু হু করে কেঁদে ওঠে। সে কান্না স্বামীর মৃত্যুর জন্য নাকি ছেলেমেয়েদের মুখে নতুন কথা শুনে, বুঝতে পারে না সে নিজেই। 



ব্রতীন বসু 

হাত


রাত আটটায় সেতুটা ভাঙার পর পরই ছবিটা সোসাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ল।
একটা হাত, বড় সিমেন্টের চাঁই চাপা, মুঠো খুলে গেছে। দুটো এক্লেয়ারস গড়িয়ে পড়েছে রাস্তায়।

পরের দিন অনেক মিছিল হল।
নেতা মন্ত্রী আমলা বিরোধী সবাই বলল কিছু।
বড় বড় ক্রেন শরীরী লোহার হাত ভাঙা পাথর প্রকৃতি পুরুষ নারী শিশু দেহ সরালো ।
খুব সুন্দর গাছ দিয়ে সাজানো ছিল সেতুটা।

সূর্যের আলো নিভে যেতে সাত বছরের টুবাই সব দেখতে দেখতে চোখের জল মুছতে মুছতে খেয়াল করেনি কখন চোখ লেগে গেছে।
হঠাৎ বিছানার পাশের জানালায় ঠকঠক আওয়াজ ।
কে?
টুবাই, আমি যন্ত্র, কথা কম বলি। যা বলছি ভাল করে শোন। আজ অন্যের নির্দেশে আমি তোমার বাবার হাত নিয়েছি নিজের বুকে নিজের হাতে করে। আমি অনেক ভেবেছি। আমার ক্ষমতা কম যতটুকু পারি ওইটুকুই করতে চাই।
এখানে এখন আমি কাজ করব অনেক দিন। তোমার বাড়ি কাছে। মালিকরা গ্যারেজ করে চলে গেলে রোজ রাতে আমি তোমাকে এক্লেয়ারস এনে দেবো।  
আমাকে তোমার বাবার হাত হতে দেবে?
টুবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল লোহার হাতটার দিকে।
লোহার বুক। নরম লোহার হাত। ওর বাবার মতই বিশাল ? 



                                                  HOME

[এই লেখাটা শেয়ার করুন]