free web page creator

[ঈশানকোণ নতুন সংখ্যা দেখার জন্যে এখানে ক্লিক করুন]


গল্পাণু            Home        
দীপঙ্কর গুপ্তের তিনটি অণুগল্প



এক গোছা চাবি

একগোছা চাবি মায়ের নিত্যসঙ্গী ছিল, তবে অন্য মহিলাদের মত আঁচলে বা কোমরে কোনদিন বাঁধতে দেখি নি । ছোটবেলাতে চাবির গোছাটা আমার একটা কৌতূহলের বস্তু ছিল ।
কৌতূহলটা বেশী হত চাবিগুলোর চেহারা দেখে ।  
চাবিগুলোর কোনোটার চেহারা তলোয়ারের মত, আবার কোনোটা সাপের মত । এমন অজস্র চাবি । শুনেছি কয়েদখানায় এমন অজস্র চাবি থাকে, যার মধ্যে আসল চাবি হাতে গোনা দু-একটি । কয়েদিরা চাবি হাতে পেয়েও যাতে বেরিয়ে যেতে না পারে তারজন্যেই এমন উপায় । 
ছেলেবেলায় আমার কয়েদকালীন অবস্থা ছিল । দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর মা , বাড়ির গেটে তালা দিতেন
ঐ চাবির ছড়া থেকে একটি চাবি দিয়ে । চাবিটা উদ্ধার করতে পারিনি, তাই বাড়ির ভিতর খেলার মাঠের কল্পনা করে কত দুপুর কাটিয়েছি, অথচ এমন একটা চাবির গোছার স্মৃতি আজও মুছে ফেলতে পারিনি । মা যেদিন মারা গেলেন, বাবা ঐ চাবির গোছা থেকে একটা চাবি আমার গলায় ঝুলিয়ে দিলেন ।



ব্যতিক্রম

দত্তগিন্নির আর কর্তার ঝগড়া নতুন কোন ব্যাপার নয় । দাম্পত্য কলহ সব পরিবারেই কমবেশী আছে । টক-ঝাল-মিষ্টি সব মিলিয়েই দাম্পত্য ।
সেদিন দত্তবাবু হঠাৎই বাথরুমে পড়ে গিয়ে অচৈতন্য হলেন, রক্তে ভেসে গেল বাথরুমের সাদা টাইল্‌স । দত্তগিন্নি দুরাত্রি না ঘুমিয়ে হাসপাতালের বেডের পাশে শুশ্রূষা করলেন । তিন দিনের দিন জ্ঞান ফিরে এল । শুরু হয়ে গেল আবার ঝগড়া, আমরা আশঙ্কিত হলাম । ডাক্তার-নার্স সবাই আশঙ্কিত ।দত্তবাবুর হাতের অবস্থা ভাল না । দত্ত আর দত্তগিন্নি অনবরত চড়া গলায় ঝগড়া করছেন, থামবার জো নেই । হঠাৎ দেখি হাসপাতালের বেডের পাশেই যে দত্তগিন্নি গত দুদিন একবারের জন্যে চোখ বন্ধ করেননি, ওনার নাক গর্জন করছে । দত্তগিন্নি নিঃসাড়ে নাক ডেকে ঘুমিয়েই চলেছেন । হঠাৎ ঘুম ভাঙতেই দত্তগিন্নি অজান্তেই শুরু করে দিলে বক্‌বকম -- । তখন দত্তবাবু ঘুমুচ্ছেন নাক ডেকে ...... ।


বেত

বাবা একদিন স্কুল থেকে ফেরার সময় ইয়া লম্বা বাঁশের আগা নিয়ে এলেন, বর্ণনা করলেন, এটা ভাঙেনা, দুমড়ে-মুচড়ে দিলেও আবার আগের জায়গায় । এমন একটা বেতের ঘা খেয়ে স্কুলের অনেক দুষ্ট ছাত্রের পিঠের ছাল উঠেছে । শরীর বেয়ে রক্ত ঝরেছে । দূর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বেতের সংকোচন-প্রসারণ দেখালেন বাবা ।
একসময় বেতটার স্থান হল ঘরের আলমারির উপর । আর দুষ্টুমি করলেই বেতটা উপর থেকে নামিয়ে অঝোরে ঘা চলত । বেতের ঘা’গুলি খাটের কোণায় অথবা টেবিলের পায়ে এখনও স্মৃতি হয়ে আছে । তবে ঐ বেতটা একটা সময় আমার গলায় কাঁটা হয়ে বিধেঁছিল । তাই একদিন দুপুরবেলা মা যখন কাজের শেষে বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন, বাবা স্কুলে ---- এই সুযোগে চেয়ার টেনে আলমারি বেয়ে উপরে উঠে বেতটা নিয়ে ভাল করে চাপ দিতেই ভেঙে দু টুকরো । ভয় গেল না, তাই আরও তিন চার টুকরো করলাম । রামায়ণের হরধনু ভঙ্গ করার মতো মনে হল । আনন্দে চিৎকার করে উঠলাম, হঠাৎ চেয়ে দেখি মা-বাবা দু’জনেই দাঁড়িয়ে হাসছেন ।


                                                  HOME

[এই লেখাটা শেয়ার করুন]