লগনবাবু – স্বাতী ধর

লগনবাবু – স্বাতী ধর

লগনবাবু           (অনুগল্প)

স্বাতী ধর

লগনবাবুর সত্যি কথা বলার এলেম আছে। স্পষ্টবক্তা। গলাবাজিও করতে জানেন। দেশভক্তিও আছে। নিজস্ব আর্থিক লাভক্ষতি নিয়ে ভাবেন না। জনগণের উন্নতি নিয়ে চিন্তাও করেন। অনেক দিনের সিনিয়র পুরোনো নেতা বলে নিজেদের দল নিয়েও খুব চিন্তা করেন। কিন্তু মুশকিল হল, চারিদিকে উঠতি নতুন জুনিয়র নেতাদের রমরমা বেড়েই চলেছে, আর সিনিয়র তিনি নিজের দলের মধ্যে পিছিয়েই পড়ছেন। আর উঠতি অনেক নেতাই সুবিধাবাদী ঝানু রাজনীতিবিদ, তারা একের কথা অন্যকে লাগিয়ে নিজেদের পথটাকে প্রশস্ত করে নেয়। লগনবাবু এসবে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু তিনি খুব চিন্তান্বিত। কারণ দলের মধ্যে তার আসন টলমলে হয়ে যাচ্ছে। দলের মধ্যে তার প্রভাব কমে যাচ্ছে। কিন্তু কীভাবে প্রভাব বাড়ানো যেতে পারে ? কোনো উপায় খুঁজেই পাচ্ছেন না তিনি। অবশেষে রিমার দেওয়া একটা উপায় তাঁর বেশ পছন্দ হয়ে যায়। সম্পর্কে রিমা তার বোনের স্মার্ট মেয়ে, এ বছরই কলেজে ভর্তি হয়েছে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে। রিমা বলে, মামু এ যুগটা হচ্ছে সোস্যাল মিডিয়ার যুগ। তুমি ফেসবুকে একটা একাউন্ট খুলে প্রচার চালাও। দেশের জনগণের উন্নতি নিয়ে, সামাজিক বৈষম্য, অব্যবস্থা, তোমার দলের মোটিভ, অ্যাজেন্ডা সব কিছু প্রতিদিন পোস্ট করতে থাকো। ফ্রেন্ড-ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য মার্কেটিং শুরু করো।
রিমাই মামুর মোবাইলে লগনবাবু নামে ফেসবুকে এক একাউন্ট খুলে দেয়। কিন্তু প্রতিদিন কী পোস্টিং দেবে লগনবাবু ভেবেই পান না। রিমাই বুদ্ধি বাতলে দেয়, বলে, মামু তুমি প্রথমে ফেসবুকের ভালো ভালো পোস্টিং দেখে শেয়ার করতে শুরু করো। রিমার কথামত লগনবাবু প্রতিদিন চার-পাঁচটা করে শেয়ার করতে লাগলেন। এতে একটা ব্যাপার তিনি লক্ষ করতে থাকেন মধুমিতা নামে এক সুন্দরী মহিলা তার সব পোস্টে ‘লাভলি’ ‘ফাইন’ ‘এক্সিলেন্ট’ ইত্যাদি কমেন্ট করেই চলেছে। একদিন সেই সুন্দরী মহিলা তাঁকে ইনবক্সে ‘হাই’ পাঠায়, সঙ্গে একটা লিংক। লগনবাবু ভাবেন তাঁর প্রভাব বুঝি বেড়ে চলছে। তিনি খুশিতে সেই লিংকে একটা ক্লিক মারতেই একের এক লিংক আপনাআপনি খুলতে থাকে। আর সে লিংকগুলির কাপড়হীন মহিলা-পুরুষের নগ্ন এবং মৈথুনরত ছবি-ভিডিও প্রথমবারের মত দেখে শিউরে উঠেন লগনবাবু। কী করে এগুলি বন্ধ করবেন কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেন না। তাড়াতাড়ি মোবাইলের সুইচ অফ করে দেন।
কয়েক ঘন্টা পর আবার যখন তিনি মোবাইল অন করেন, আবার আগের নগ্ন ছবি-ভিডিওগুলি ফুটে উঠতে থাকে। উপায়ান্তরবিহীন ভাবে তিনি মোবাইলের সেটিংস-এ গিয়ে ফ্যাক্টরি রিসেট অপশন খুঁজতে থাকেন। মোবাইল কেনার সময় মোবাইলের দোকান থেকে বুঝিয়ে দিয়েছিল দিয়েছিল ফ্যাক্টরি রিসেট টিপে মোবাইলটাকে ক্লিন করা যায়। শেষপর্যন্ত তিনি ফ্যাক্টরি রিসেট অপশনটা পেয়ে যান এবং সেখানে টিপে দেন। তাতে সেভ করে রাখা ফোন নাম্বার সুদ্ধ সব কিছু ক্লিন হয়ে যায়। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, জীবনে আর কোনদিন সোস্যাল মিডিয়াতে পা দেবেন না।