শিক্ষিত কে – সমিত রায় চৌধুরী

শিক্ষিত কে     (অনুগল্প)

সমিত রায় চৌধুরী

সুচেতার মনটা ভার। প্রথমে কলিগদের সাথে ঝগড়া তারপর বসকে মাসিক রিপোর্ট জমা দিতে না পারা। সব মিলিয়ে দিনটা একদমই ভালো না।

তাদের অফিস পাড়ার সামনেই একটা ঝিল। ঝিলের পারেই ছোট পার্ক। পার্কে গিয়ে বসলো সুচেতা। পার্কটা বেশ সুন্দর। অফিস ছুটির পর বা লাঞ্চ ব্রেকে অফিস কর্মীরাই বসে এখানে।
সুচেতার মন খারাপ হলেই ঠিকানা হয় এখানটায়। ঝিলের আঁকাবাঁকা ধার ধরে লম্বাটে আকৃতির পার্ক। পামগাছের সারি আর ঝাউগাছের মাঝে মাঝে ছোট ছোট পাতাবাহার আর ফুলগাছ। তার মধ্যে আছে কিছু ব্রিটিশ আমলের কাঠের বেঞ্চ।

এমন একটা বেঞ্চে ঝিলের দিকে মুখ করে বসে আছে সুচেতা।
এমন সময় সামনে এসে দাঁড়ালো ছোট একটি ছেলে। হাতে কিছু চিপস্-এর প্যাকেট। সামনে দাঁড়িয়েই বলল,

এক প্যাকেট দশ টাকা। একটা নিন না দিদিভাই।
চেহারাটা দেখে সুচেতার মায়া হলো। ইচ্ছে না থাকলেও নিয়ে নিল একটি প্যাকেট।
দশ টাকার নোটটা পকেটে পুরেই ছেলেটা বলে উঠলো,
দিদিভাই খাওয়ার পর প্যাকেটটা ওই খানে একটি সবুজ ডাস্টবিন আছে, সেখানে ফেলে দেবেন। ছেলেটার কথায় দম ছিল।
কথাটা শুনে সুচেতার মনটা হঠাৎ অফিসের ঝামেলা থেকে সরে আসলো। তার বক্তব্য সুচেতাকে ভাবিয়ে তুলল।
সাথে সাথেই আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো। তার অফিসের অফিস-সুপার মিতালিদি বেশ আয়েশ করে কমলালেবু খেয়ে চলছেন। সাথে চলছে খোসা থেকে শুরু করে আরো কী কী মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা।

সুচেতার সামনেই পড়ে আছে খালি প্লাস্টিকের একটি বোতল।
সুচেতা চিপস্ খেয়ে হাতে খালি প্যাকেটটা নিয়ে বসে রইলো। ভাবলো যাওয়ার সময় সবুজ ডাস্টবিনে ফেলবে।
কিছুক্ষন পর ছেলেটা আবার হাজির।
দিদিভাই প্যাকেটটা আমাকে দিন। আমি ফেলে দিচ্ছি ডাস্টবিনে।
সুচেতা ছেলেটার মুখের দিকে তাকাতেই সে আবার বলল,
এই পার্কে আমি প্রত্যেকদিন চিপস্ বিক্রি করতে আসি, পার্কটা পরিষ্কার না থাকলে ভালো লাগে না। আমি একা আর পারি না। বলে, মিষ্টি হেসে খালি প্যাকেটটা ও মাটিতে পড়ে থাকা খালি বোতলটা হাতে নিয়ে চলে গেলো।
ছেলেটার ব্যবহার সুচেতার ভিতরটা নাড়িয়ে দিল। সুচেতা উঠে দাড়িয়ে মিতালিদির দিকে হাঁটা শুরু করলো। জঞ্জাল মুক্ত পরিবেশ গড়ার প্রথম পদক্ষেপটা সেখান থেকেই সে শুরু করবে।