শুভাশিস চৌধুরীর কবিতা

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত তুরস্কের সেই সকাল

শুভাশিস চৌধুরী

১. দৃশ্যপট

আমি তো আছি ভয় কি রে তোর
বড়দি যে তোর! নয়কো দাদা।
তুই ছাড়া যে কেউ নেই আর
আহা! ভাইটি আমার, ঘুমিয়ে কাদা।

ঘন্টা পেরোয় ঘন্টার পর
               কেটে গেছে সাড়া রাত
কেমন করে সরাই পাথর
               বয়স আমার মাত্র সাত।

কেউ এসে পাথরটা সড়িয়ে দাও
মানুষের কাছে আমাদের নিয়ে যাও।

ঐ শোনা যায় পায়ের শব্দ আসছে ওরা আসছে বাঁচাতে।
চিৎকার শুনে তোমরাই এলে ত্রাতার মতো মানুষ রূপেতে ।

বাঁচালে যারা তোমরাও মানুষ একথা জানবো আমরা দুজন।
আরো নিচে দেখ শুয়ে আছে মোর পিতামাতা সহ আত্মজন।

পাথরের নিচে যেন অভিমানী
জাগবে না ওরা কোনোদিন জানি।

যে শিশু দেখল তারই ঘরের দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে আছে তার মা বাবার লাশ।
তারই চেতনায় একদিন জেগে উঠবে প্রকৃতিকে ভালোবেসে আবিশ্ব গড়ে তোলার প্রয়াস।

২. ভালোবাসা

শরীর মাটির নীচে তবুও
একটা শিশুর হাত দেখা যায়-
হাতটি ছাড়েনি কুকুরটি তার
বন্ধু ছাড়া কি বাঁচা যায়?
গলায় ঝুলানো ঘন্টা নাড়িয়ে
কুকুরটি কেঁদে মরে !
সেই দেহ আনে পাথর সড়িয়ে
নিয়ে যেতে তারে কবরে।

৩. ইচ্ছে

মাটি পাথর সরিয়ে দেখি বুকে জড়িয়ে সন্তান। জড়ানো হাত ছাড়িয়ে আনতেই কেঁদে উঠলো শিশুটি।প্রাণ আছে। প্রাণ আছে। প্রাণই এক আশ্চর্য সম্পদ। যেন নিথর পিতৃকন্ঠে ধ্বনিত হলো সেই অমোঘ উচ্চারণ। এই সব দৃশ্য আজ সত্য। আসুন সেই পিতার ইচ্ছাকে লালন করি।

৪. মাতৃপরশ

সন্তান খোঁজে মাতৃস্তন! রেখে গেছে মেয়ে মাস ছয় যার-
যতনে তাহারে বুক খুলে দেয় চার বছরের দিদিটি তার ।
দিদি তো দেখেছে স্তন ভরা মাকে যেভাবে আগলে রাখতে হয়।
সে নিয়মে তাই চেষ্টা চালায় কান্না থামাতে দূরে ঠেলে ভয়।
বোঝেনা তো দিদি হয়নি বয়স কীভাবে
থামাবে বোনের রোদন।
মায়ের বুকে তো দুধ ভরা ছিল তাই দিয়ে তার থামাতো কাঁদন।
এই সব ছবি ঘুরে ফেরে আজ তুর্কির থেকে সিরিয়ার ঘরে।
চোখ ভেজে শুধু চোখের জলেতে বেঁচে আছে যারা দাঁড়ায়ে দুয়ারে।

৫. আভাস

বিহগী তো জেনেছিল
তাই ঘর ছেড়েছিল
অসময়ে সন্ধ্যায় সে কী কলরবে।
তোমরা বোঝোনি যারা
কোলাহল ভেবেছিলে
দরদালানের নীচে আজ ঘুমাও নীরবে।
সব পাখি ফিরে এল
বেলা শেষে নিজঘরে
এসে দেখে ধুলিসাৎ ডেরা।
মনে মনে বলে তারা
আমাদের ভাষা হায়
বুঝতে শিখবে কবে এরা।
পাখিদের গান আজ কান্না রোল তোলে,
প্রেমিকার লাশ দেখে মৃত প্রেমিকের কোলে।