বরফ পথ – ব্রতীন বসু

বরফ পথ

ব্রতীন বসু

সেদিন সন্ধ্যাবেলা ফোনটা বেজে উঠলো, কিরে কেমন আছিস, আমি কলকাতা আসছি, দেখা করবি? সায়ন, আমরা ক্লাসে পাশাপাশি বসতাম বারো ক্লাস অবধি, প্রায় পনেরো বছর পর গলা শুনলাম।
মুম্বাইতে থাকে, বছরে দু তিনবার করে কলকাতায় আসে, বিয়ে করেছে, এক ছেলে — অন্য বন্ধুদের মারফৎ খবর উড়ে আসতো। এর মধ্যে কখনো যোগাযোগ করেনি। খারাপ লাগা, অভিমান, বিস্মৃতি যেভাবে বরফের ওপর নতুন বরফ জমে ডিপ ফ্রিজে সায়ন বলে কেউ জমা হয়ে ছিল। গলাটা যেন কোথায় একটা ডিফ্রস্ট বাটন টিপে দিল। কবে দেখা করবি বল, কোথায় ?
নির্ধারিত রেস্তরায় দুপুরের লাঞ্চ করলাম, চুটিয়ে আড্ডা মারলাম, ওর ছেলে মেয়ের গল্প। ওর ওয়াইফ চাকরি করে, ছুটি নেই, ও একাই এসেছে। একদিন বাড়িতে আসতে বললাম ডিনারে।
প্রথম থেকেই জিজ্ঞেস করবো করবো ভাবছি, ওয়েট করছিলাম, যদি নিজে থেকেই প্রসঙ্গটা তোলে। শেষে বেরুবার আগে প্রশ্নটা করেই ফেললাম,
সায়ন, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো, কিছু মনে করবি না তো?
আরে না না, বল না।
তুই এতো দিন কোন যোগাযোগ রাখলি না, বিয়েতে পর্যন্ত ডাকলি না, এবারে এসে, মানে, আমি ভাবতাম তুই আমাকে ভুলেই গেছিস।
ও কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, এমনি রে, তোকে সত্যি কথাটা বলেই ফেলি ফ্র্যাঙ্কলি। তোর সুরেনকে মনে আছে, যে ক্লাসে আমার মেইন কম্পিটিটর ছিল, তুই দুচক্ষে দেখতে পারতিস না, আমি ফার্স্ট হলে ওকে ডেকে আওয়াজ দিতিস, সে এখন আমার ইমিডিয়েট বস। সেদিন আমাদের বাড়িতে আমার ছেলের জন্মদিনে এসেছিল, কথায় কথায় তোর কথা উঠলো। ওই সাজেস্ট করল, এবারে কলকাতা গেলে তোর খবরটা নিতে। তোর ফোন নম্বরও সুরেনের কাছেই ছিল, বোধহয় ওর বিয়ের সময় তোকে নেমন্তন করেছিল, ওই আমাকে দিল। ভেরি স্যরি, চিন্তা করিস না, তোর ফোন নাম্বারটা তো রইল, নেক্সট টাইম থেকে দেখা হবেই।
নো প্রবলেম, হ্যাঁ এলে ফোন করিস।
অনেকগুলো কথা একসাথে। ওদের পেরিয়ে জলের আবার বরফ পথে যেতে সময় লাগবে।
সিম কার্ডটা কি বদলে নেবে?
ছেলেমানুষি, নাকি মেনে নেওয়া, কোনটা উচিত, জলকে প্রশ্রয় দেবে না বরফকে?