সুজিত বসুর কবিতা

বিচ্ছেদ

সুজিত বসু

একসঙ্গে থাকা বহুদিন
অতিরিক্ত পরিচয় থেকে বাড়ে ঘৃণা
ভালোবাসা দিগন্তে বিলীন
মুখোশের অন্তরালে লুকিয়ে যে তাকে তো চিনি না

হয়তো আমারও মুখ অন্ধকারে ঢাকা
আলো কি কখনো ছিল, না কি তা ছিল না
একরাশ ক্লান্তি নিয়ে ঘুরে যায় চাকা
তৃষ্ণার সমুদ্রে ডুবে জীবনের নকশিকাঁথা বোনা ।

পিসায় সোনালি দিন

সুজিত বসু

ধূসর অতীতে স্কুলের বইতে ছবি দেখে তাকে চেনা
পরেও দেখেছি বহুবার নেটে স্বপ্নিল বিস্ময়ে
আজ তার পাশে দাঁড়িয়েও যেন অটুট সে মায়াজাল
হেলানো টাওয়ার রোদ্দুর মাখে উদ্ধত অবিনয়ে

অভিকর্ষকে উপেক্ষা করে হেলানো টাওয়ার স্থির
হেলে আছে তবু আভূমি প্রণামে করেনি সে মাথা নত
সোনালি রোদের আভায় মিনার এখনও যুবতি সাজে
সময়ের জরা সরিয়ে দূরে সে আজও আছে উদ্ধত

পিসায় আসার কথা তো ছিল না, রোম মিলানকে ছুঁয়ে
নিজস্ব নীড়ে ফেরা হবে এই কথা জমা ছিল মনে
কে জানে কেন যে তবু আসা হলো বাধার বাঁধন ছিঁড়ে
হেলানো টাওয়ার কাছে টেনে নেয় অমোঘ আকর্ষণে

কিছু কথা তার বলার যে ছিল সে কথা বুঝেছি পরে
আমাকে সে বলে জানি তুমি গেছ বিপদের ঝড়ে হেলে
চোখ মেলে দেখো আমাকে, কিভাবে অবিচল আছি স্থির
পড়ো না মাটিতে, ফুঁ দিয়ে ওড়াও বিঘ্নকে অবহেলে।


প্যারিস থেকে লসান

সুজিত বসু

থমথমে রাত্তিরে ঝমঝম চলে ট্রেন
ঘুটঘুটে নিশুতির মায়াময় জোছনায়
সুইজারল্যানডের দিকে যেন অহিফেন
পানে খুব মত্ততা, প্যারিসের আলোমালা
হাতছানি দিয়ে গাঢ় সংকেতে কেঁপে যায়
সুজিত সুজিত বলো কুড়ি দিনে ক্লান্তি
কতটা জমেছে আর কতকিছু কুড়োলে
রত্নের ভান্ডারে বিষময়ী পান্না
সে সবও ফুরিয়ে যায়. আর একটু ফুরোলে
মোহমায়া প্রেম স্নেহ মমতা ও শান্তি
ভীষণ কুলুপ দিয়ে রাখো যেন ভালো তালা
খোলে না কিছুতে আর, থাক তবে আর না
বলবো না আর তবে গোপনতা বেদনা
লন্ডন থেকে যাকে নিয়ে যাও রোম, তার
ঘোমটাও খুলবো না, দীপ্তি ও চেতনা
নিভে যাক গাঢ় ভাবে, ঝকমকে ঘোমটার
মধ্যেই থেকে যাক ক্রূর কালো সাপিনী
তুমি জলধারে বসে সান্ত্বনা লিখনে
শোনাও লাস্যগীতি, ছলনায় চিকনে
মাপো প্রেম গভীরতা, আমি হায় মাপি নি।