ক্ষ্যামা দাও — সদানন্দ সিংহ

ক্ষ্যামা দাও

সদানন্দ সিংহ

সকাল থেকেই কানে কেবল এক গানের কলি ভেসে আসছে, “বাবা গো, ফোড়ন দাও ফোড়ন দাও। তোমার নয়নতলে চরণতলে স্থান দাও।” এই সুরের সঙ্গে দামামার এক শব্দ। অথচ এই সুরটা আমি আগে জীবনেও শুনিনি, গানের গায়ক আছে কিনা তাও জানি না। আর আশ্চর্য কলিটা বারবার আমাকে বাজাচ্ছে। তবে কি আমার মতিভ্রম হয়ে গেল? একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম।
এইসময় দেখলাম, সেনাপতিদা বাজারের থলি হাতে রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে সেনাপতিদা আমার কাছে এসে অনেক উদ্ভট পরামর্শ চান। এই যেমন কিছুদিন আগে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আয়ারাম-গয়ারামকে এক কথায় কী করে প্রকাশ করা যায়?
আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, আ গয়া।

সেনাপতিদা বললেন, মানে, বুঝলাম না।
আমি বললাম, মানে একদম সোজা, আয়ারাম-গয়ারাম তো চলে যাবে, তবে আবার আসবে তো। তাই আ গয়া।
সেদিন সেনাপতিদা আমার কথা মেনে নিয়েছিলেন। আজ আমি ভাবলাম, সেনাপতিদার পরামর্শ আজ চেয়ে দেখি। আমি সেনাপতিদাকে ডাক দিলাম। সেনাপতিদা এলেন। আমার সঙ্গে একতলার বারান্দায় বসে জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার হে? কেনো ডেকেছো?
জানালাম আমার সমস্যার কথা। তারপর পরামর্শ চাইলাম। শুনে সেনাপতিদা একটু হেসে বললেন, এ তো একদম পরিষ্কার। তোমার ওপরে তিনি ভর করেছে। মানে তিনি তোমার মাথার ওপরে হাজির হয়েছেন।
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, তিনিটা কে?
সেনাপতিদার সাফ উত্তর, তিনি মানে তিনি। তোমাকেই খুঁজতে হবে তিনি কে?
— আমাকেই খুঁজতে হবে? কোথায় খুঁজতে হবে?
— যেখানে সেখানে। চারিপাশে। তোমার মাথার ওপর।
আমি বললাম, আমাকেই খুঁজতে হবে? আচ্ছা ধরুন, আমি তাঁকে খুঁজে পেলাম। তখন তিনি আমায় কী কী প্রদান করবেন? বা কী কীই বা আদান করবেন? মানে আদান-প্রদানের ব্যাপারটা কেমন হবে?
সেনাপতিদা একটু অখুশি হলেন, ছি ছি, সব জায়গাতেই আদান-প্রদানের চিন্তা কেন করতে হবে? তাঁকে খুঁজে পেলে তিনিই সবকিছু তোমায় দিতে থাকবেন, কারুর চিন্তা করার কিছু নেই। তিনিই বলে দেবেন তোমায় কী কী করতে হবে।
এই সময় আমার কানে আরেকটা গানের কলি ভেসে এল, দাদাভাই ক্ষ্যামা দাও, ক্ষ্যামা দাও।
তাড়াতাড়ি আমি সেনাপতিদাকে হাতজোড় করে বললাম, দাদাভাই ক্ষ্যামা দাও, ক্ষ্যামা দাও। আমায় একটু একা থাকতে দাও।