উমা মণ্ডলের কবিতা

আমি সাদা পাতা ও শব্দ ঈশ্বরী

উমা মণ্ডল



মহাশূন্যের সম্মুখে বসে থাকা হাত পেতে
আঙুলের ঠোঁট বেয়ে উঠে আসা সদ্যজাত
প্রিয় শব্দরূপ

ভ্রূণ ছিল এইমাত্র, খুলে গেল মিশ্রকলাবৃত্ত
অগোচরে। যদি বলো বেখায়ালে মেনে নেব
ধানসিঁড়ি থেকে ওঠা বাঁশি চরম বিপদ
রাধিকার জপ ছেড়ে সে আমার গোঠে
সেইসব স্রোত অকস্মাৎ উল্টে-পাল্টে চক্র
কুলকুণ্ডলিনী বেয়ে ঋতুকাল মোহগ্রস্ত
বশীভূত পথিকের ন্যায় চলাফেরা

সে কি আমার আত্মজ
অন্ধকূপে বেড়ে ওঠা কালবৈশাখীর তাপ
আগুনের ভাষা বড়ো ক্লান্ত এই বাস
জলভরা মেঘ ফিরে দেখেনা, গাছের ভাষা
ভুলে গেছি। সবুজের আত্মহত্যা
হয়তো নিয়তি হে অনন্ত লীলাময়

এইভাবে বসে থাকা হাত রেখে সাদা
পাতার সম্মুখে


আসলে শব্দেরা অভিমানী স্বভাবের
প্রিয়তম সন্তানের মতো
দোলনায় চুমু খেয়ে রাতদিন সাধন ভজন
তারপর হামাগুড়ি কেটে হাতে উঠে আসে
কচি কচি শব্দ
আড়চোখে দেখে দুষ্টু গোপাল আমার
ধ্যানে বসে যাত্রা
অসীমের পথে লালন পালন
কাগজে কাগজে বেলা যায়

ওঠে ত্রিনয়ন এক অন্তর্ভেদী বাণ
রক্ত শুধু রক্ত দেখি মাগো
রক্তের বীজ চিনে নেওয়া তলদেশ থেকে
থেকে চারা মহীরুহ
রূপটানে মেতে ওঠা কৃষক লাঙল টেনে
রামায়ণ তুলে আনে


অসুস্থ শব্দেরা বড়ো অসহায়, মলিন চৌকাঠে
মাথা মুড়ে বসে
সূর্যের রশ্মির ছটা গায়ে লাগে না ওদের
সালোকসংশ্লেষ হয় না, ধূসর চিত্র
গুঁড়োগুঁড়ো অসুখের কোপে
ক্ষণজন্মা দাগ
আঁকাবাঁকা রেখা বোঝেনি জলের গভীরতা
অববাহিকায় মৃত যখ অপেক্ষায়

এমন শব্দের পাশে বসি
হাতে রত্ন তাগা বেঁধে দিই
বিষ নজরের গায়ে আগুন দারুণ বেগে
ভেলা কবেই স্বর্গের ঘাটে পৌঁছে গেছে
লখিন্দর যদি আবার কঙ্কালের ভাষায় কথা বলে
ঘুঙুরের ঝোলা বন্দি সিন্দুকে অবহেলায়
শরীরের মাত্রালয় লুপ্তপ্রায় বেশ কিছুকাল
আর্তনাদ করে নাচঘরে ঘুঘুদল


সাদা প্রেক্ষাপট সরস্বতী আমার, অনন্ত মহাশূন্য
আয়নার কাছে নত হই বারবার
কখনও ত্রিশূল
দাউদাউ ক্ষত
কখনও পাখির ডাক
ডানা পেয়ে গেছি;
উড়ে যাই ভাষার আকাশে
তুলে ধরি পঞ্জিকার নক্ষত্র পতন
একটা দুটো করে তুলে নিই আশ্চর্য জ্যোৎস্না
আশ্রমের মাটি খুঁড়ি পুঁতে দেবো বলে
ক্ষেত্রফলে জমে ওঠে কুবেরের ধন

সাদা পাতায় আসলে আশ্রমের রূপ দেখি