রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ – সদানন্দ সিংহ

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ

সদানন্দ সিংহ

রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সংঘর্ষ আট মাস পেরিয়ে নয় মাসে পড়ল। কে প্রথম এই সংঘর্ষ শুরু করেছিল বা দোষ কা’র – এসব প্রশ্ন এখন গুরুত্বহীন। এখন দুটো প্রশ্ন সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে – এক) এই যুদ্ধ কখন থামবে ?  দুই) যদি না থামে তাহলে কী হবে ?

এই যুদ্ধ কখন থামবে ?

সত্যি বলতে কি এই প্রশ্নের উত্তর এখন আমাদের মতো সাধারণ লোকদের কারুর জানা নেই। কারণ এর পেছনে রয়েছে এক বিরাট জিও পলিটিক্স। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই পলিটিক্সেরই অঙ্গ। এতো ধ্বংস এবং মৃত্যুর পরও কমেডিয়ান জেলেনস্কির মনোবল এখনো তুঙ্গে, এখনো তার বিশ্বাস রাশিয়াকে তারা পরাজিত করতে পারবেই। কারণ তার পেছনে আছে আমেরিকা এবং তার ন্যাটো বাহিনী। ইউক্রেন ধ্বংস হোক, লোক মরুক, তাতে জেলেনস্কির কিছু আসে যায় না। ইগো বলে কথা। আর আমেরিকাও তাই চায়। আমেরিকা চায় তার অস্ত্রগুলি বিক্রি হোক আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ুক। আমেরিকা তাই চাইবে না যুদ্ধটা এখনই বন্ধ হোক। আসলে যুদ্ধটা রাশিয়ার সাথে আমেরিকার এক কায়াযুদ্ধ। জেলেনস্কি আমেরিকার কায়াবাহিনী। যুদ্ধ যত গড়াবে রাশিয়ার অর্থনীতি তত দুর্বল হয়ে পড়বে। এটা পুতিনও জানে। এছাড়া রাশিয়ারও ক্ষয়ক্ষতিও দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। তাই পুতিনের যুদ্ধ বিরামের ডাকে জেলেনস্কি নিশ্চুপ। তাই এই মুহূর্তে যুদ্ধ থেমে যাবার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

তাহলে কী হবে ?

যুদ্ধ না হলে কী হতে পারে এর তিনটি উত্তর পাওয়া যাচ্ছে। এক) রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করার উদ্দেশ্যে ইউক্রেনের ওপর ছোট আকারের পরমাণু বোমা ফেলতে পারে। দুই) রাশিয়ার সাথে আমেরিকা এবং তার ন্যাটো বাহিনীর যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। আর যুদ্ধ যদি হয় তা হবে পরমাণুর যুদ্ধ। তিন) যেভাবে এখন যুদ্ধ চলছে সেভাবেই যুদ্ধটা আরো গড়াতে পারে।

এবার তিনটা উত্তর নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

১) রাশিয়া যদি ইউক্রেনের ওপর পরমাণু বোমা ফেলে তাহলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভারত এবং চিন সহ সমগ্র বিশ্ব চলে যাবে। ফলে রাশিয়া একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়বে। তাই মনে হয় না রাশিয়া ইউক্রেনে পরমাণু বোমা ফেলবে।

২) আর রাশিয়ার সাথে যদি ন্যাটো বাহিনীর পরমাণু যুদ্ধ হয় তাহলে কেউই আর রক্ষা পাবে বলে মনে হয় না। এর ভয়ংকর পরিণতির কথা রাশিয়া এবং ন্যাটো বাহিনী সবাই জানে। সুতরাং সাধারণত কেউই চাইবে না এরকমটা হোক।

৩) তাহলে এখন যেভাবে যুদ্ধটা চলছে সেভাবেই চলতে থাকবে ?

আমেরিকা তো চাইছে যুদ্ধটা চলুক। জেলেনস্কি তো আমেরিকার পুতুল। রাশিয়া এখন চাইছে যুদ্ধটা এবার শেষ হয়ে যাক। যুদ্ধবিরামের কথা পুতিন বলেছেও। জেলেনস্কি এখনো তা চাইছে না। ন্যাটো বাহিনীর কিছু দেশও যেমন ফ্রান্স এবং জার্মানি চাইছে না যুদ্ধ চলুক। এই যুদ্ধের ফলে ইউরোপের অর্থনৈতিক অবস্থাও দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে।
এদিকে আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো বাহিনীর ৩০ সদস্যের মধ্যে ১৪ সদস্য ইউরোপে পারমাণবিক স্ট্র্যাটিজির বিমান মহড়া চালাচ্ছে। কেউ কেউ বলছে এটা নাকি ফার্স্ট স্ট্রাইকের মহড়া। পুতিন তো অনেকবারই ন্যাটো দেশগুলিকে ফার্স্ট স্ট্রাইকের হুমকি দিয়েছে। আমেরিকা এবং রাশিয়া কেউ নত হচ্ছে না। ইউক্রেন দ্বারা ক্রিমিয়ার ব্রিজ ধ্বংসের পর রাশিয়াও একটু আগ্রাসী হয়ে পড়েছে। সুতরাং অবস্থা মোটেই ভাল নয়। রাষ্ট্রনায়কদের বিচক্ষণতার অভাব যে কোনো মুহূর্তে মানবজাতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

তাই এই মুহূর্তে এই যুদ্ধের পরবর্তী ঘটনা কী হতে পারে তা পরিষ্কার নয়। তবে হয়তো একটা মোটামুটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে ডিসেম্বরের মধ্যেই শীত পড়ার আগে। সেটা যে ‘শান্তি’-র পথ অবশ্যই হবে – তা কেউ বলতে পারছে না। এমনও হতে পারে আমেরিকা তার সঙ্গীসাথিদের নিয়ে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে পড়েছে নামে-বেনামে। সেজন্যই কি জেলেনস্কির মনোবল এতো তুঙ্গে ?