অ্যানি এরনো, সাহিত্যে নোবেল ২০২২ – সদানন্দ সিংহ

অ্যানি এরনো, সাহিত্যে নোবেল ২০২২

সদানন্দ সিংহ

ফরাসি লেখিকা এবং প্রফেসর অ্যানি এরনো এবছর ২০২২ সালে সাহিত্যে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। সাহিত্যে তাঁর “ব্যক্তিগত স্মৃতির শেকড়, বিচ্ছেদ ও সামষ্টিক বাধাগুলি উন্মোচিত করার সাহস ও চিকিৎসকসম সূক্ষ্ণতা প্রদর্শনের জন্য” তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

অ্যানি এরনো-র জন্ম ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৪০ সালে। জন্মস্থান ফ্রান্সের Lillebonne নামক জায়গায়। বেড়ে ওঠেন ফ্রান্সের Yvetot শহরে যেখানে তাঁর পিতামাতা শহরতলীতে এক কাফে এবং মুদির দোকান চালাতেন। ইউনিভার্সিটির শিক্ষা সমাপ্ত করার পর তিনি ১৯৭০ সালের প্রথমদিকে শিক্ষকতা শুরু করেন যেখানে সেকেন্ডারি এডুকেশনের শিক্ষা দেওয়া হত। ১৯৭১ সালে মর্ডান লিটারেচার নিয়ে উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করে পরপর দুটো কলেজের শিক্ষকতায় যোগ দিয়ে ছেড়ে চলে আসেন National Center for Distance Education-এ এবং ২৩ বৎসর তিনি এখানেই শিক্ষকতা করেছেন।

১৯৭৪ সাল থেকে তাঁর সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। ১৯৭৪ সালে তার প্রথম বই Les Armoires vides (ক্লিনড আউট) যা ছিল এক আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। অ্যানি এরনোর লেখা শুধুমাত্র তাঁর নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাই নয়, তাঁর প্রজন্ম, তাঁর পিতামাতা, মহিলা, অচেনা অন্যদের পাবলিক স্পেসে সম্মুখীন হওয়া, ভুলে যাওয়া ব্যক্তিদেরও অন্বেষণ অব্যাহত রেখেছেন তাঁর লেখায়। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তার লেখার মাধ্যমে ফুটে ওঠা মূল বিষয়গুলি হল – শরীর এবং যৌনতা; অন্তরঙ্গ সম্পর্ক; সামাজিক বৈষম্য এবং শিক্ষার মাধ্যমে শ্রেণী পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা; সময় এবং স্মৃতি; এবং এই জীবনের অভিজ্ঞতাগুলি কীভাবে লিখতে হয় তার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এরনো-র রচনায় সবচেয়ে ব্যক্তিগত, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞতাগুলি – হোক না সেটা শোকের, শ্রেণীগত লজ্জা, যৌনতা, আবেগ, অবৈধ গর্ভপাত, অসুস্থতা বা সময়ের উপলব্ধি – যা অন্যদের দ্বারা শেয়ার করা এবং ঘটে যাওয়া সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি প্রেক্ষাপটের প্রতিফলন।

তিনটি আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস (Cleaned Out, What they say goes and The Frozen Woman) প্রকাশিত হওয়ার পর, A Man’s Place প্রকাশের মাধ্যমে এরনো পূর্ববর্তী ফর্ম থেকে সরে আসেন। এই প্রক্রিয়ায় তিনি আখ্যানের ফর্মগুলি আবিষ্কার করেছেন যা জীবনের লেখার নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি করেছে যেমন A Man’s Place-এ autosociobiographical টেক্সট প্রয়োগ। ‘একটি মহিলার গল্প এবং লজ্জা’ লেখায় তাঁর নিজের এবং তাঁর পিতামাতার জীবন অন্বেষণ, সামাজিক পরিবেশও যেখানে বিকশিত। আবার সমবেত আত্মজীবনী, The Years, লেখায় দেখা যায় ১৯৪০ থেকে ২০০৭ সালে তাঁর জন্মের পর থেকে ফ্রান্সের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। এরনো এছাড়াও প্রকাশ করেছেন তাঁর ডায়েরির নির্যাস (I remain in Darkness, Getting Lost) এবং ‘Diaries of the outside’, যেখানে তিনি সুপারমার্কেট, ট্রেন এবং প্যারিস মেট্রোর মতো পাবলিক স্পেসে অন্যদের সাথে তার মুখোমুখি হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি work in progress (‘দ্য ডার্ক ওয়ার্কশপ’/ L’Atelier noir), a dialogue with another writer (‘রাইটিং শার্প অ্যাজ আ নাইফ’/ L’Écriture comme un couteau, with Frédéric-Yves Jeannet), এবং স্মৃতিকথা যা লেখার প্রতিফলনের সাথে তীব্র ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বর্ণনাকে যুক্ত করে (Simple Passion, Happening, The Possession, A Girl’s Story, ‘The Young man’/ Le Jeune homme)। Two works, ‘The Uses of Photography’/ L’Usage de la photo* and ‘Writing Life’/ Écrire la vie লেখাগুলি ফটোগ্রাফিক উপস্থাপনার মাধ্যমে চিহ্নিত। আবার ‘দ্য আদার ডটার’/ L’Autre-এ এরনো তাঁর জন্মের আগে মারা যাওয়া বোনকে একটি চিঠি লেখেন। অবশেষে, এরনো তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলির সাথে তার সম্পর্কের আলোচনা প্রকাশ করেছেন (‘Where I belong’/ Le Vrai lieu; ‘Return to Yvetot’/ Retour à Yvetot)

এরনো-র বইগুলি বিশ্বস্ত পাঠকদের দ্বারা সমাদৃত, এবং ফ্রান্সের বেশিরভাগ স্থানীয় এবং জাতীয় সংবাদপত্রে আলোচিত, সেইসাথে অনেক রেডিও এবং টেলিভিশন সাক্ষাৎকার, প্রোগ্রামের বিষয়বস্তু এবং ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক একাডেমিক সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর উপন্যাসগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে প্রকাশিত।

পুরস্কার দেওয়া প্রসঙ্গে ইন্টারভিউ দেখুনঃ https://www.youtube.com/watch?v=T6n5Iuam6U4