অনুগল্প

ঈশানকোণ একটি বাংলা সাহিত্যের ওয়েবব্জিন জুলাই-আগস্ট সেপ্টেম্বর ২০১৮ সংখ্যা

গাছ
সদানন্দ সিংহ

রবিনবাবুদের নারিকেল গাছটা একেবারেই রাস্তার লাগোয়া। বেশ লম্বা। গাছটার ওপর অংশটা বেঁকে একটু রাস্তার দিকে এসে সোজা ওপরে উঠে গেছে। গাছটায় এখন প্রায় সারাবছরই নারিকেল ঝুলে থাকে। সেই রাস্তায় চলতে গেলেই কমলাকান্তের রীতিমত ভয় হয়। ঢুপ করে তার মাথায় যদি একটা নারিকেল এসে পড়ে তাহলে তো একদম অক্কা। ভয়ে সে রাস্তার মাঝ বরাবর না হেঁটে একদম কিনার দিয়ে দুরু দুরু বুকে হেঁটে রাস্তা পার হয়। এ নিয়ে সে রবিনবাবুকে কয়েকবার অনুরোধ করেছে, গাছটাকে কেটে ফেলার জন্যে। রবিনবাবু হেসে উত্তর দিয়েছেন, গাছটা লাগিয়েছি পনেরো বছর হল, কিন্তু কই, আজ পর্যন্ত তো কিছুই হয়নি। আপনি মশাই অযথা ভয় পাচ্ছেন। নারিকেল মাথায় পড়ে পৃথিবীতে আজপর্যন্ত কেউ মারা গেছেন আপনি দেখাতে পারবেন?
সত্যিই কমলাকান্ত জানেনা, পৃথিবীতে এভাবে কেউ মারা গেছেন কিনা। তাই ভয়ে ভয়ে আগের মতোই রাস্তা পার হয়। এভাবেই দিন যায়।
একদিন রাস্তা দিয়ে যাবার সময় কমলাকান্ত আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করে রবিনবাবু নিজে দাঁড়িয়ে থেকে একজন লোককে দিয়ে নারিকেল গাছটা কাটাচ্ছেন। কমলাকান্তকে দেখে রবিনবাবু বলে ওঠেন, গাছটা কাটাচ্ছি। কমলাকান্তের বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হয়, তাই সে বলে, আজ হঠাৎ! এতোদিন তো আপনি রাজি হন নি!
রবিনবাবু উত্তর দেন, তাতে কী, শেষে আপনার কথা তো রাখতে পেরেছি।
কমলাকান্ত বেশ খুশি হয়। চলে যায়।
আসল ব্যাপারটা কমলাকান্তের কোনোদিনই জানা হয়না যে, গাছটা থেকে একটা নারিকেল আছড়ে পড়ে রবিনবাবুর গিন্নির আদরের বেড়ালের এক পা ভেঙে গেছিল বলে রবিনবাবুর গিন্নিই আদেশ দিয়েছিলেন গাছটাকে কেটে ফেলার জন্যে।
                                                                    HOME       

এই লেখাটা শেয়ার করুন